সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন, যার বিস্তৃতি বাংলাদেশ ও ভারতের উপর জুড়ে প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশ প্রায় ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার। এটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত নয়, বরং রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমির, নানা প্রজাতির পাখি এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্যও প্রসিদ্ধ। তাই ভ্রমণপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য সুন্দরবন একটি অনন্য গন্তব্য।
কিভাবে পৌঁছাবেন
সুন্দরবন ঘুরতে হলে প্রথমে খুলনা, মংলা বা সাতক্ষীরায় পৌঁছাতে হবে।
- ঢাকা থেকে খুলনা: বাস (৮-৯ ঘন্টা), ট্রেন (চিত্রা, সুন্দরবন এক্সপ্রেস), অথবা লঞ্চে যাওয়া যায়।
- খুলনা/মংলা থেকে সুন্দরবন: এখান থেকে লঞ্চ বা ট্রলার ভাড়া করতে হয়। অনেক ট্যুর কোম্পানি প্যাকেজ আকারে ভ্রমণের সুযোগ দেয়।
ভ্রমণের সেরা সময়
- অক্টোবর থেকে মার্চ (শীতকাল): এই সময় আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে এবং বনের ভেতর সহজে ঘোরা যায়।
- এপ্রিল থেকে জুন: গরম আবহাওয়া, তবে কম ভিড় থাকে।
- বর্ষাকাল (জুলাই–সেপ্টেম্বর): বৃষ্টি বেশি হওয়ায় নদীর স্রোত তীব্র থাকে, ভ্রমণ কঠিন হতে পারে।
দেখার মতো প্রধান স্থান
- কোটকা সৈকত ও জঙ্গল – রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণ দেখার সম্ভাবনা বেশি।
- কচিখালী (Tiger Point) – নৌকায় করে বনের ভেতর ঢোকার রোমাঞ্চকর জায়গা।
- হারবাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার – ঘন বন ও পাখির অভয়ারণ্য।
- করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র – হরিণ, কুমির, বানর কাছ থেকে দেখার সুযোগ।
- হিরণ পয়েন্ট – পাখি, হরিণ এবং মাঝে মাঝে বাঘ দেখার সম্ভাবনা থাকে।
- দুবলা চর – জেলেদের মেলা ও সামুদ্রিক মাছ ধরা দেখার অন্যতম জায়গা।
থাকার ব্যবস্থা
- খুলনা শহরে: মানসম্মত হোটেল ও গেস্টহাউস রয়েছে।
- মংলা: মাঝারি মানের হোটেল পাওয়া যায়।
- লঞ্চ/ট্রলার: বেশিরভাগ ভ্রমণকারী লঞ্চেই থাকেন। ট্রাভেল এজেন্সি বুকিং করলে লঞ্চে থাকা, খাওয়া ও নিরাপত্তা একসাথে পাওয়া যায়।
খরচ
- গ্রুপভিত্তিক ৩ দিন ২ রাতের ট্যুর জনপ্রতি সাধারণত ৮,০০০ – ১২,০০০ টাকা।
- খরচের মধ্যে সাধারণত খাবার, থাকা, নৌকাভ্রমণ ও গাইডের চার্জ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- লাক্সারি লঞ্চ বা ছোট গ্রুপে গেলে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে।
খাবার
সাধারণত লঞ্চেই খাবারের ব্যবস্থা থাকে। ভাত, মাছ, ডাল, সবজি, দেশি মুরগি ইত্যাদি পরিবেশন করা হয়। তবে চাইলে নিজস্ব কিছু শুকনো খাবার বা স্ন্যাকস সঙ্গে নিতে পারেন।
ভ্রমণ টিপস
- বন বিভাগের অনুমতি (পারমিট) আগে থেকেই নিতে হবে।
- গাইড ছাড়া বনে প্রবেশ করা যায় না।
- মশা, পোকামাকড়ের জন্য স্প্রে বা ওষুধ সঙ্গে রাখুন।
- পানির বোতল, শুকনো খাবার, সানগ্লাস ও ক্যামেরা নিতে ভুলবেন না।
- বন ও প্রাণীর ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না (প্লাস্টিক, শব্দদূষণ, গাছ কাটা ইত্যাদি)।
- সাঁতার বা নদীতে নামা ঝুঁকিপূর্ণ, তাই এড়িয়ে চলা ভালো।
নিরাপত্তা
- নৌকায় সবসময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন।
- গাইড বা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলুন।
- প্রাণীর কাছাকাছি যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
শেষ কথা
সুন্দরবন ভ্রমণ কেবল একটি ভ্রমণ নয়, এটি প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে গেলে এই ভ্রমণ হবে স্মরণীয় ও নিরাপদ। বাংলাদেশে যারা প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী এবং অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন, তাদের জন্য সুন্দরবন একটি অবশ্যই দেখার মতো জায়গা।



