বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলোর একটি হলো সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। এটি দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত। নীল সমুদ্র, সাদা বালির সৈকত, প্রবাল প্রাচীর আর নারিকেল গাছঘেরা সবুজ পরিবেশ – সবকিছু মিলে দ্বীপটিকে করে তুলেছে প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি। স্থানীয়রা একে “নারিকেল জিঞ্জিরা” নামেও চেনে।
কীভাবে যাবেন
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাওয়ার সবচেয়ে প্রচলিত উপায় হলো সমুদ্রপথ।
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার/টেকনাফ – প্রথমে বাস বা বিমানযোগে কক্সবাজার বা টেকনাফ যেতে হবে।
- টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন – টেকনাফ জেটি থেকে যাত্রীবাহী জাহাজ বা ট্রলার ছাড়া হয়। প্রায় ৯ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে দ্বীপে পৌঁছাতে ১.৫–২ ঘণ্টা সময় লাগে।
- ভ্রমণের সময় – অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত নিয়মিত জাহাজ চলাচল করে। বর্ষাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে।
কী কী দেখবেন
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য শুধু সৈকতে সীমাবদ্ধ নয়। দ্বীপের প্রতিটি জায়গায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আকর্ষণ।
🌴 চেরাদ্বীপ
সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ। ভাটার সময় পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়। এখানে প্রবাল প্রাচীর, ঝিনুক আর সাগরের নীল জল এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করে।
🌴 সৈকত ও বালুচর
সেন্ট মার্টিনের সৈকত সাদা বালিতে ঘেরা এবং অত্যন্ত পরিষ্কার। সকালের সূর্যোদয় ও সন্ধ্যার সূর্যাস্ত এখানে ভ্রমণকারীদের বিশেষভাবে মুগ্ধ করে।
🌴 প্রবাল ও সামুদ্রিক জীবন
এটি দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হওয়ায় এখানে নানা রকম প্রবাল দেখা যায়। শীতকালে পানির স্বচ্ছতায় মাছ ও সামুদ্রিক জীবনের বিচরণ স্পষ্ট দেখা যায়।
🌴 নারিকেল ও সুপারি বাগান
দ্বীপে প্রচুর নারিকেল ও সুপারি গাছ রয়েছে। এখানকার তাজা নারিকেল পানির স্বাদ ভ্রমণকারীদের জন্য এক বিশেষ উপহার।
কোথায় থাকবেন
দ্বীপে কয়েকটি রিসোর্ট, হোটেল ও কটেজ আছে। জনপ্রিয় থাকার জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ব্লু মারিন রিসোর্ট
- প্রিন্স হেভেন
- সি পার্ল রিসোর্ট
👉 বাজেট অনুযায়ী সাধারণ গেস্ট হাউসও পাওয়া যায়। চাইলে টেন্ট ভাড়া নিয়ে সৈকতে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতাও নিতে পারেন।
খাবার
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে গেলে স্থানীয় খাবারের স্বাদ না নিলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
- টাটকা সামুদ্রিক মাছ (রূপচাঁদা, কোরাল, লইট্টা ইত্যাদি)
- লবস্টার ও কাঁকড়া
- স্থানীয় ঝাল-মশলার তরকারি
- তাজা নারিকেল পানি
ভ্রমণ পরামর্শ
✔️ ভ্রমণের সেরা সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।
✔️ দ্বীপে বিদ্যুতের ব্যবস্থা সীমিত, তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন।
✔️ পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। (প্লাস্টিক ফেলা, প্রবাল ভাঙা ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিষেধ)।
✔️ সমুদ্র উত্তাল থাকলে গভীরে নামবেন না।
✔️ ক্যামেরা বা ড্রোন সঙ্গে নিলে দ্বীপের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য ধরে রাখতে পারবেন।
কেন যাবেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপে?
বাংলাদেশে অনেক সমুদ্রসৈকত থাকলেও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মতো এতটা প্রশান্ত, নিরিবিলি আর রোমান্টিক পরিবেশ আর কোথাও নেই। এখানে প্রকৃতির স্বচ্ছ সৌন্দর্য ভ্রমণকারীদের মনে তৈরি করে এক অমলিন স্মৃতি।
👉 সব মিলিয়ে বলা যায়, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হলো ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক স্বর্গীয় দ্বীপ। নীল সমুদ্র, প্রবাল, নারিকেল গাছ আর নির্জন সৈকতের সমন্বয়ে এই দ্বীপে ঘুরে আসলে জীবনের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়।



